Wednesday, March 6, 2013

ডায়াবেটিস আছে কিনা জানুন


ডায়াবেটিস রোগী ছাড়াও যাদের নিকটাত্মীয়ের ডায়াবেটিস আছে, যাদের ওজন বেশি, ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রমের কাজ তেমন করেন না, তারা নিম্নে উল্লিখিত রক্তের পরীক্ষাগুলোর মাধ্যমে ডায়াবেটিস সম্পর্কে জানতে পারেন

খালি পেটে বা খাবারের আগে (Fasting Blood Glucose) : এ পরীক্ষাটি সকালে নাস্তার আগে খালি পেটে করতে হয়এর স্বাভাবিক মাত্রা ৬.১ মিলিমল/লিটার বা তার কম
খাবারের দুই ঘণ্টা পরে (2 Hour After Breakfast) : এ পরীক্ষাটি নাস্তা খাওয়ার দুই ঘণ্টা পরে করতে হয়এর স্বাভাবিক মাত্রা ১০ মিলিমল/লিটার বা তার কম
যে কোন সময় (জধহফড়স) : এ পরীক্ষাটি দিনের যে কোনো সময় করা যেতে পারেএর স্বাভাবিক মাত্রা ৫.৫ থেকে ১১.১ মিলিমল/লিটার
Oral Glucose Tolerance Test (OGTT) :
যাদের খালি পেটে FBG 6.1 এর বেশি কিন্তু ৭.০ মিলিমল/লিটারের কম কিংবা দিনে যে কোনো সময় ৫.৫-এর বেশি কিন্তু ১১.১ মিলিমল/লিটারের কম, তাদের এ পরীক্ষাটি করা খুবই জরুরিকারণ এ পরীক্ষাটির মাধ্যমে কারও ডায়াবেটিস আছে কি নেই, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবেএ পরীক্ষাটির জন্য রোগীকে প্রথমে খালি পেটে রক্ত দিতে হবেএরপর ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ পানিতে মিশিয়ে খেতে হবে এবং ঠিক দুই ঘণ্টা পর রোগীকে আবার রক্ত দিতে হবেএই দুই ঘণ্টা রোগী অন্য কোনো খাবার খেতে পারবেন নাকোনো ধরনের শারীরিক পরিশ্রমের কাজও করতে পারবেন নাধূমপান করা যাবে না পরীক্ষায় যে রোগীর খালি পেটে ৭.০ মিলিমল/লিটারের চেয়ে বেশি এবং দুই ঘণ্টা পর ১১.১ মিলিমল/লিটারের চেয়ে বেশি হবে তাকে নিশ্চিত ডায়াবেটিক রোগী হিসেবে চিহ্নিত করা যাবে

গ্লাইকোলাইলেটেড হিমোগ্লোবিন : এ পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তে গত ৪ মাসের গ্লুকোজের মাত্রার একটা ধারণা পাওয়া যাবেএ পরীক্ষাটি খালি পেটে অথবা খাওয়ার পর যে কোনো অবস্থায় করা যায়এর স্বাভাবিক মাত্রা ৭% নিচে থাকা বাঞ্ছনীয়

ডায়াবেটিসের ভয়াবহতা
ডায়াবেটিসকে তাই বলা হয় সব রোগের মাডায়াবেটিসের জটিলতাগুলোই আসলে এই রোগের মূল সমস্যাশরীরে এমন কোনো অঙ্গ নেই যেখানে ডায়াবেটিস তার ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে নাউন্নত বিশ্বের অধিকাংশ দেশে ডায়াবেটিসকে মৃত্যুর চতুর্থ প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হয়ে থাকেডায়াবেটিসে সাধারণত যেসব সমস্যা হতে পারে তা হলো
কিডনির অক্ষমতা বা কিডনি বৈকল্যবিশ্বের অনেক মানুষ ডায়াবেটিসের কারণে কিডনির সমস্যায় ভোগে
বিশ্বে প্রতি ৩০ সেকেন্ডে একটি করে পা কাটা যাচ্ছে ডায়াবেটিসজনিত কারণে আবার যত পা কেটে ফেলতে হচ্ছে, এর ৮৫ শতাংশের প্রধান কারণ রোগীদের অসচেতনতা
ডায়াবেটিসে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়েচোখে রেটিনোপ্যাথি হয়ে চোখে কম দেখা, ঝাপসা দেখা, চোখের ছানিপড়া ইত্যাদি সমস্যা হতে পারেঅন্ধত্ব ও দৃষ্টিবিচ্যুতির নানা কারণ ডায়াবেটিস
ডায়াবেটিস হলে হৃদরোগের ঝুঁকি এবং হার্ট অ্যাটাক হয়ে মৃত্যুর আশঙ্কা বাড়ে
ডায়াবেটিসে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়ফলে শরীরে বাসা বাঁধে নানা রকম ইনফেকশনআবার পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি হলে হাত-পা জ্বালাপোড়া করাসহ বোধশক্তি কমে যায়শরীরের মাংসপেশিগুলো দুর্বল হয়ে যায়
দরকার সুশৃঙ্খল জীবন
কারও ডায়াবেটিস রোগ হলে সে যদি নিয়ম মেনে চলে তবে সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের চেয়েও সে ভালো থাকবেডায়াবেটিসে কেউ মারা যায় না যতক্ষণ না অন্য সমস্যাগুলো জটিল আকার ধারণ করেডায়াবেটিস নিরাময়যোগ্য নয় তবে নিয়ন্ত্রণযোগ্যনিয়ম মানলে একে নিয়ন্ত্রণ করা যায়পরিমিত খাদ্য, নিয়মিত ওষুধ ও সুশৃঙ্খল জীবনএই তিনটি নীতি ডায়াবেটিসের রোগীরা সঠিকভাবে পালন করলে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবেন

প্রতিরোধে করণীয়
সচেতনতা এবং সুশৃঙ্খল জীবনাচরণই ডায়াবেটিসের প্রধান চিকিত্সাঅনেক দিন ধরে বিভিন্ন গবেষণা করে দেখা গেছে, টাইপ-২ ডায়াবেটিস বহুলাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব
প্রথমেই খাবার-দাবারে নিয়ম মেনে চলতে হবেতবে প্রয়োজন অনুযায়ী পরিমিত সুষম খাবার গ্রহণ করতে হবেচিনি, মিষ্টিযুক্ত খাবার (সফট ড্রিঙ্ক, চকলেট, কেক, পেস্ট্রি, কুকি ইত্যাদি) কম খেতে হবেশাক-সবজি এবং আঁশজাতীয় খাবার খেতে হবে
ক্যালরিবহুল খাবার যেমনতেল-চর্বিযুক্ত খাবার (তেল, ঘি, মাখন, ডালডা, চর্বি, ডিমের কুসুম, মগজ ইত্যাদি) কম খেতে হবেফাস্টফুড এড়িয়ে চললে ভালো শর্করাবহুল খাবারগুলো (চাল, আটা ইত্যাদি দিয়ে তৈরি খাবার) কিছুটা হিসাব করে খেতে হবেশাকসবজি, ফলমূল বেশি করে খেতে হবেদৈনিক ক্যালরি হিসাব করে খাবার খেতে হবেপ্রয়োজনে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে হবে
ফাস্ট-ফুড এবং কোল্ড-ড্রিঙ্কস পরিহার করতে হবেপ্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি পান করুনবিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানে পরিবেশিত রিচ ফুড যথাসম্ভব পরিহার করুন
ধূমপানসহ ও তামাক বর্জন করতে হবেঅ্যালকোহল মোটেই নয়
একটা বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ তা হলো কায়িক শ্রম ও ব্যায়ামতবে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট করে সপ্তাহে ১৫০ মিনিট দ্রুততায় হাঁটুনসাইকেল চালান, সাঁতার কাটুন কিংবা সিঁড়ি ভাঙুনমনে রাখবেন, রক্তের গ্লুকোজগুলোকে পোড়াতে হবে কাজের মাধ্যমেই
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী আপনার উপযুক্ত ব্যায়াম নির্বাচন করুনকারণ সব ব্যায়াম সবার জন্য উপযুক্ত নয়ব্যায়াম করছেন এ ধারণা মাথায় রেখে অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ করবেন না
একটানা অধিক সময় বসে কাজ করবেন নাকাজের ফাঁকে উঠে দাঁড়ানএকটু পায়চারি করুন
উচ্চতা অনুযায়ী ওজন স্বাভাবিক মাত্রায় রাখার চেষ্টা করতে হবেএকই সঙ্গে মেদভুঁড়ি যেন না বাড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে
বিষণ্নতা ডায়াবেটিস বাড়ায়, তাই মনকে প্রফুল্ল বা মানসিক চাপমুক্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে
খাওয়ার ওষুধ বা ইনসুলিন যাই হোক চিকিত্সা নিয়মিত চালাবেনরক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে থাকলে শরীরের সব অঙ্গই ঠিক থাকবে
শিশু-কিশোরদের মধ্যে আজকাল টাইপ-২ ডায়াবেটিস বেড়ে যাচ্ছেতাই এরা যেন অপুষ্টিতে না ভোগে আবার অতিপুষ্টিতে ওজন না বাড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে একই সঙ্গে শিশুরা যেন শ্রমবিমুখ না হয়, তা দেখাও গুরুত্বপূর্ণ
গর্ভকালীন মায়ের পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে যেন গর্ভস্থ শিশু অপুষ্টিতে না ভোগে
একান্তই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকলে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের পরামর্শমত চিকিত্সা গ্রহণ করুনওষুধ, ব্যায়াম, খাদ্যগ্রহণ তথা সার্বিক জীবনযাপন সংক্রান্ত তার সুনির্দিষ্ট এবং বিজ্ঞানসম্মত নির্দেশনা (যা শুধু আপনার জন্য প্রযোজ্য) মেনে চলুন
m~Î: Avgvi †`k

No comments:

Post a Comment